Physical changes during puberty
This content was developed for Bangladeshi Nationals.
বয়ঃসন্ধির সময় শরীর অনেক ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। আর এই পরিবর্তনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে মেয়ে ও ছেলে সবাইকেই যেতে হয়। একটি মেয়ের সুন্দর ও আত্মবিশ্বাসীভাবে বেড়ে ওঠার পথটা যেমন অনেক আনন্দময় তেমনি নতুন কিছু অভিজ্ঞতা ঘাবড়ে যাওয়ার কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। কিন্তু পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়াটি অস্বাভাবিক কিছু নয়।
- শারীরিক বৃদ্ধি
এ সময়ে একজন কিশোরী মেয়ের শারীরিক গঠনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। প্রথমে দেহের হাত ও পা-এর হাড় বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সেই বাড়ন্ত শরীরের সাথে খাপ খাওয়াতে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। স্তন, নিতম্ব, উরুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মেদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বয়ঃসন্ধিকালের মধ্যভাগে এই বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং বয়ঃসন্ধিকাল শেষ হবার মাধ্যমে এই বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয়।
- স্তন বৃদ্ধি
বয়ঃসন্ধির প্রথম লক্ষণ হিসেবে মেয়েদের এক বা উভয় স্তনের বোটার নিচে সাধারণত শক্ত ও কোমল পিন্ড দেখা যায়। এরপর ৬-১২ মাসের মধ্যে স্তন উভয় পাশেই ফুলে ও নরম হয়ে ওঠে। তবে একটি মেয়ের শারীরিক গঠন আরেকজনের থেকে আলাদা। তাই এর বৃদ্ধির প্রক্রিয়াও সমান নয়। স্তনের আকার বড় বা ছোট হওয়ার বিষয়টি শারীরিক গঠন ও পরিবারের সদস্যদের বংশানুক্রমে শারীরিক গঠনের উপর নির্ভর করে। সাধারণত ২ থেকে ৩ বছর সময় দরকার হয় স্তনের পূর্ণাঙ্গ বৃদ্ধিতে।
- যৌনাঙ্গে চুলের আবির্ভাব
শরীরের বেশ কিছু নতুন স্থানে লোমের উৎপত্তি ঘটে। তলপেটের নিচে ও যৌনাঙ্গে চুল দেখা যায়। অনেক মেয়ের ক্ষেত্রে স্তন বৃদ্ধির পূর্বেই যৌনাঙ্গের ওপরের অংশে যা তলপেটের খুব কাছাকাছি সেখানে চুলের উৎপত্তি দেখা দেয়। আস্তে আস্তে তা সম্পূর্ণ যৌনাঙ্গকে ঘন চুলে আবৃত করে ফেলে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লেগে যায়।
- যোনি, জরায়ু ও ডিম্বাশয়-এ পরিবর্তন
এসট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যোনির মিউকোসার পৃষ্ঠের পরিবর্তন হতে থাকে। বয়ঃসন্ধির আগে যে উজ্জ্বল লাল ভ্যাজাইনাল মিউকোসা থাকে তার থেকে এটি তুলনায় মোটা ও অনুজ্জ্বল গোলাপী বর্ণের হয়ে থাকে। জরায়ু এবং ডিম্বাশয় ধীরে ধীরে আকারে বৃদ্ধি পায় এবং ডিম্বাশয়ের ফলিকলগুলো বড় হয়ে ওঠে।
- তরল জাতীয় পদার্থের নিঃসরণ
বয়ঃসন্ধির শুরুতে যোনিপথকে আর্দ্র ও পরিষ্কার করতে দেহ এক ধরনের তরল জাতীয় পদার্থের নিঃসরণ করে থাকে। এটি এস্ট্রোজেনের প্রভাবে হয়ে থাকে যা সাধারণত ঘন বা পাতলা সাদা রঙের। এটি সাদাস্রাব হিসেবে পরিচিত। মাসিক শুরু হওয়ার পূর্বে হলুদ বা সাদা রঙের তরল পদার্থ যোনিপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে। একে বলা যায় যোনিপথ আর্দ্রতার প্রাকৃতিক পদ্ধতি। পরবর্তী ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে মাসিক হওয়ার পূর্ব সংকেত দেয় এই তরল নিঃসরণ।
- মাসিক চক্র ও উর্বরতা
সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে মাসিকের শুরু হয়। প্রজননক্ষম বয়স পর্যন্ত সকল মেয়ে ও নারীর জীবনে মাসিক একটি প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক ঘটনা। শুরুর প্রথম দুই বছর মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। প্রজননক্ষম বয়সের হিসেবে একজন নারীর মাসিকের সময়কাল প্রায় ৩৮ বছর। এর মধ্যে গড়ে ৪৫০ বার মাসিক চক্র ঘটে। এই মাসিক চক্রের মাধ্যমে নারীর দেহে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে যা তার শরীরকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। আর এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষিক্ত ডিম্বাণু ধারণে জরায়ুর আভ্যন্তরীণ আস্তরের পুরুত্ব বৃদ্ধি পায় ও ইউটেরাস যথেষ্ট উর্বরতা অর্জন করে । পুরো মাসিক চক্রটি নিয়ন্ত্রিত হয় হরমোন দ্বারা। এক্ষেত্রে এস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরোন হরমোন মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
- ত্বকে অতিরিক্ত ব্রণ
বয়ঃসন্ধিকালে বয়সে ছেলেমেয়েদের অনেকেই ব্রণের সমস্যায় ভোগে। অ্যান্ড্রোজেন নামক হরমোন এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। বয়ঃসন্ধির সময় এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। অ্যান্ড্রোজেনের কারণে ত্বকের তেল গ্রন্থিগুলো আকারে বৃদ্ধি পায় ও বেশি পরিমাণে সিবাম উৎপন্ন করে। ফলে ত্বকে ব্রণের সৃষ্টি হয়। বয়ঃসন্ধির সময় ও মাসিকের পূর্বে দেহের ভেতরে সৃষ্ট এই তেলের কারণে বিশেষ করে মুখের ত্বকে ব্রণের দেখা দেয়। তবে এই পরিবর্তন অনেকের ক্ষেত্রে দেখা দেয় আবার অনেকের ক্ষেত্রে না-ও হতে পারে।
- শরীরে ঘামের বৃদ্ধি
এই সময় শরীরের যে গ্রন্থিগুলো ঘাম উৎপন্ন করে সেগুলো আকারে বড় ও আগের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
- যৌন অনুভূতি
বয়ঃসন্ধিকালে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ এবং যৌন অনুভূতি অনুভব করা খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে এর লক্ষণ হিসেবে যোনিপথে ভেজাবোধ হয়। যৌন অনুভূতি তৈরি হতে পারে কোন রোম্যান্টিক গল্প বা উপন্যাস পড়ে বা কোন ছেলের কথা চিন্তা করে। যৌন অনুভূতি হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার, যা বয়ঃসন্ধিকালে মানুষের স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার একটি অংশ মাত্র।
Leave a Reply